মাকড়শার জাল (Spider Web)
মাকড়শার বৃত্তাকার জালক হচ্ছে অতি জটিল ও অপরিবর্তনীয় আচরণগত প্যাটার্ণের ফলশ্রুতি। মাকড়শার অস্তিত্ব রক্ষায় এ জাল মূল ভূমিকা পালন করে। জালটি উড়ন্ত শিকার ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে, জালের সুতার উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে মাকড়শা নিজে দৌড়াতে পারে ।
মাকড়শা বৃত্তের জাল বোনে রেশমি সুতা দিয়ে। উদরীয় বিশেষ সিল্ক গ্রন্থি (silk glands) থেকে ক্ষরিত পদার্থকে শতশত অণুনালিকাযুক্ত তিনজোড়া বুননকারী (spinnerets)-র মাধ্যমে সুতা নির্মাণ করা হয়। সিল্ক গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত স্ক্লেরোপ্রোটিন (sclcroprotein) থেকে সৃষ্ট সুতা বাতাসের সংস্পর্শে এসে শক্ত রেশমি সুতায় পরিণত হয় । একই ব্যাসের ইস্পাতের সুতা অপেক্ষা মাকড়শার সুতা বেশি শক্তিশালী। টান দিয়ে ছিঁড়তে গেলে ছেঁড়ার আগে এ সুতা এক-পঞ্চামাংশ পর্যন্ত লম্বা হতে পারেসাড়া পৃথিবীতেই মাকড়শা জাল বোনে, সময় লাগে আধ ঘন্টারও কম। মাঠে যেসব মাকড়শা বাস করে তাদের অধিকাংশই খুব ভোরে সুর্যোদয়ের সময় জাল বোনে। জালিকা বৃত্ত একটি নিয়ত গঠন- এতে রয়েছে কাঠামো frame), অরীয় স্পোক (radial spokes) এবং আঠাল প্যাচ (viscid spirals)। হ্যান্স পিটার্স (Hans Peters, 1939) সর্বপ্রথম মাকড়শার জাল বোনার ধাপ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
মাকড়শার জাল বোনার শুরুতে একটি Y-আকৃতির ভারা (রাজ মজুরদের ভারা) নির্মাণ করে, এরপর কাঠামো ও অরীয় স্পোক, এবং সবশেষে অন-আঠাল ও আঠাল প্যাঁচ সৃষ্টি করে। প্রত্যেক ধাপে সৃষ্ট জালকগুলো সঠিক কোণ ও দূরত্ব অনুসরণ করে নির্মিত হয়। এভাবে নিখুঁত কৌণিক বৃত্তাকার জাল নির্মাণ মাকড়শার সহজাত আচরণের অন্যতম উদাহরণ।